3rd Wave Feminism
3rd Wave Feminism কে পোস্ট মডার্ন ফেমিনিজম বা উত্তরাধুনিক নারীবাদ বলা হয়। 3rd Wave Feminism হলো 2nd Wave Feminism এর রিজেকশান, শুধু রিজেকশানই না সমালোচনাও করে। 2nd Wave Feminism এ যেসব মূল আইডিয়া উঠে আসে 3rd Wave Feminism সে আইডিয়া গুলোর সমালোচনা করে সেগুলোকে রিজেক্ট করার চেষ্টা করে। 2nd Wave Faminism এ মূল ফোকাস ছিল নিপীড়নের উপর, তারা বলে পৃথিবীর যে কোন স্থানের, যে কোন শ্রেণীর নারীর একটা কমন অভিজ্ঞতা হলো 'মেল ডোমিনেন্স'। মেল ডোমিনেন্স দিয়েই পৃথিবীর সকল নারীকে একটা শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। শুধুমাত্র নারী হবার কারণে তারা নিপীড়িত। 2nd Wave Feminism এ এসব আইডিয়া নিয়ে 'উইমেন সেন্টার্ড পলিটিক্স' এর জন্ম হয়।
3rd Wave Feminism-এ এসে 2nd Wave Feminism এর এসব আইডিয়াগুলোকে প্রশ্নের সম্মুখীন করে তোলে। মেল ডোমিনেন্স দিয়ে নারীদের যে কমন গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত করা হয় তা কি প্রতিটি শ্রেণীর, বর্ণের, জাতির নারীর প্রতিনিধিত্ব করে? পৃথিবীর প্রতিটি শ্রেণীর, প্রতিটি দেশের নারীদের কি সমস্যাগুলা একই রকম? শুধুমাত্র নারী হবার কারণেই কি পুরুষ কর্তৃক নির্যাতনের শিকার? 3rd Wave Feminism, 2nd Wave Feminism এর মৌলিক ধারণাগুলো বাতিল করে দেয় পোস্টমর্ডানিজম এর সহায়তায় দিয়ে। পোস্টমর্ডানিজম সরলীকরণের মত মর্ডানিষ্ট ধারণাগুলো বাতিল করে দেয়।
পোস্ট মডার্ন ফেনিজমের কথা আসলে পোস্ট ফেমিনিজমের কথাও চলে আসে। পোস্ট ফেমিনিজম আসলে ফেমিনিজম আন্দোলনের বিপক্ষে একটি রিএকশ্যান। যা ১৯৮০এর দশকে উদ্ভব হয় আমেরিকান কিছু পুরুষের দ্বারা। পোস্ট ফেমিনিজম ধারণকারীরা মনে করে ফেমিনিজম মুভমেন্ট তাদের লক্ষ্য পুরণ করে ফেলেছে, এখন আর ফেমিনিজমের দরকার নাই। নারীরা তাদের সমানাধিকার আদায় করতে সক্ষম হয়েছে তাদের আন্দোলনের মাধ্যমে সমাজে নারীপুরুষের বৈষম্যের অবসান ঘটেছে সুতরাং আর নারীবাদো আন্দোলনের প্রয়োজন নেই বরং এখন পুরুষের অধিকার আদায়ের জন্য অন্দোলনের প্রয়োজন। 'Susan Faludi' তার বই 'The undeclared War against American Women'তে দেখিয়ে দেন পোস্ট ফেমিনিজম কীভাবে নারীদের ফেমিনিজম ইস্যু থেকে ডাইভার্ট করে দেয়। পোস্ট ফেমিনিজম কোনোভাবে পোস্টমডার্ন ফেমিনিজমের সাথে রিলেটেড নয়।
3rd Wave Feminism বলে নারীদের সমস্যাগুলো আরো গভীরে গিয়ে দেখতে হবে। প্রতিটা নারীর সমস্যাগুলো আলাদা আলাদা শুধুমাত্র নারী হবার কারণে তারা নির্যাতনের শিকার তা সঠিক নয়। শুধুমাত্র নারী হবার কারণে বৈষম্যের, নিপীড়নের শিকার বলে 2nd Wave Feminism-এ যে দাবী ছিল তা শুধুমাত্র ইউরোপ, আমেরিকার মিডল ক্লাস শ্বেতাঙ্গ নারীদের অভিজ্ঞতাকে ঘিরে তা বিশ্বের সকল নারীদের অভিজ্ঞতাকে প্রতিনিধিত্ব করেনা। তারা বলে নারীরা কী ধরণের নির্যাতনের শিকার তা নির্ভর করে পরিবেশ, পরিস্থিতির উপর। অর্থাৎ যে নারী আমেরিকাতে আছে তাদের সমস্যাগুলো একরকম, যে নারী ভারতে আছে তাদের সমস্যাগুলো আরেক রকম, অথবা যে নারী আফ্রিকাতে আছে তাদের সমস্যাগুলো এদের থেকে ভিন্ন। একজন নারী শুধুমাত্র নারী হবার কারণে বৈষম্যের, নিপীড়নের শিকার নয় বরং বর্ণ, শ্রেণী, জাতিভেদেও তারা বৈষম্যের শিকার, নিপীড়নের শিকার। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় একজন কৃষ্ণাঙ্গ নারী শুধুমাত্র নারী হবার কারণে সে নিপীড়নের শিকার নয়, সে কৃষ্ণাঙ্গ হবার কারণেও নিপীড়নের শিকার। সুতরাং নারীদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে হলে বর্ণ, শ্রেণী, জাতিভেদের বিষয় গুলোকেও সামনে আনতে হবে। অর্থাৎ লিঙ্গবৈষম্য ছাড়াও নারীরা জাতি, বর্ণ, শ্রেণীভেদে বৈষম্যের, নিপীড়নের শিকার।
পোস্টমডার্ন ফেমিনিজম নারী/পুরুষ, সেক্স/জেন্ডার, পুংলিঙ্গ/স্ত্রীলিঙ্গ এর মত সরলীকরণ বাতিল করে দেয়। তাদের মতে জেনারেলাইজেশন করে থাকলে নারী পুরুষ উভয়কেই দু'টি গ্রুপে ভাগ করে দেয়া হয় এবং এর বাইরে ফোকাস করা হয় না অর্থাৎ জাতি, বর্ণ, শ্রেণীভেদের গ্রুপগুলো ফোকাসে আসে না ফলে একটা বিরাট অংশ এর থেকে বাদ পড়ে যায়। এ বিরাট অংশের প্রতি হওয়া বৈষম্য, নিপীড়ন পুরোপুরি আড়ালে থেকে যায়, যা সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক। একজন নারী শুধুমাত্র নারী হবার কারণে বৈষম্যের, নিপীড়নের শিকার নয় বরং বর্ণ, শ্রেণী, জাতিভেদেও তারা বৈষম্যের শিকার, নিপীড়নের শিকার। এছাড়া কালচারাল ভিন্নতার কারণে ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম গড়ে উঠেছে সে কালচারগুলো না বুঝে সরলীকরণ করা উচিত নয়, বিভিন্ন কালচারের নারীর বৈষম্যের, নিপীড়নের ভিন্নতা রয়েছে যা সরলীকরণের মাধ্যমে এক করে দেখা তাদের একটি ক্যাটাগরিতে বা ছকে ফেলা দেয়া উচিত না। পোস্ট মডার্ন ফেমিনিজম বৈচিত্রতা, ভিন্নতাকে গ্রহণ করার কথা বলে সে কারণে ভিন্ন ভিন্ন ধারার নারীবাদের উদ্ভব ঘটে। এলজিবিডি মুভমেন্টকেও নারীবাদী আন্দোলনের অন্তর্ভুক্ত হয়।
ব্ল্যাক ফেমিনিজম নামক কৃষ্ণাঙ্গ নারীরা তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেন তারা শুধুমাত্র নারী হবার কারণে বৈষম্যের শিকার নয় তারা কৃষ্ণাঙ্গ হবার কারণেও নিপীড়িত। অর্থাৎ নারীপুরুষ নির্বিশেষে একমাত্র কৃষ্ণাঙ্গ হবার কারণে এরা বৈষম্যের শিকার। Bell Hooks, Angela Davis এরা ব্ল্যাক ফেমিনিজমের কথা বলেন। পোস্ট কোলোনিয়াল ফেমিনিজম নামক একধরণের নারীবাদের উদ্ভব হয় তারা ভিন্ন ধারার নারীবাদের কথা বলেন। তারা বলেন একটি দেশ বা ভুখন্ড যখন দীর্ঘদিন যাবত আরেকদেশের অধীনে থাকে তখন সে দেশের নারীগুলা দু'ধরণের নিপীড়নের শিকার হন। একটি হলো সে নারী হবার কারণে আরেকটি হল অন্য দেশের অধীনে থাকার কারণে। দলিত ফেমিনিজম নামক ভারতে একপ্রকার নারীবাদের জন্ম হয় যারা দাবী করে তারা শুধু নারী হবার কারণে নিপীড়িত নয়, তারা দলিত বা নিম্নবর্ণের হবার কারণে উচ্চবর্ণের নারী-পুরুষ উভয়ের দ্বারাই নিপীড়িত। ভারতের মেইন স্ট্রিম ফেমিনিজমে দলিতদের কোন জায়গা ছিল না তাই দলিত ফেমিনিজমের উদ্ভব।
'নারী হবার কারণে বৈষম্যের শিকার' এটার উপর ভিত্তি করে 2nd Wave Feminism-এ নারীদের যে একটা গ্রুপে/ছকে ফেলে দেয় 3rd Wave Feminism শ্রেণী, বর্ণ আর জাতিগত সাবগ্রুপের উদ্ভব করে অগণতান্ত্রিক বলে সে গ্রুপ/ছক বাতিল করে ফেমিনিজম পলিটিক্স অনেকটা দূর্বল করে দেয়। 2nd Wave Feminism একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর বৈষম্যের কথা বলত কিন্তু 3rd Wave Feminism বিভিন্ন শ্রেণীর, বিভিন্ন বর্ণের নারীদের বৈষম্যের কথা বলে। যখন ভিন্ন ভিন্ন সাবগ্রুপ হয়ে তাদের স্ব স্ব দাবীগুলো সামনে নিয়ে এসে নারীবাদী আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকে তখন নারীবাদী পলিটিক্স অরো শক্তিশালী হয়ে উঠে, নারীবাদী অন্দোলন আরো গতিশীল হয়ে উঠে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন