1st Wave Feminism

ফেমিনিজম কে একটা আইডিওলোজি ও একটা মুভমেন্ট দুইরকম করে ব্যাখ্যা করা যায়। যখন আমরা 1st wave, 2nd wave, 3rd wave ফেমিনিজমের কথা বলি তখন ফেমিনিজমকে একটা মুভমেন্ট বলি। ফেমিনিজমকে একটি মুভমেন্ট বলতে গেলে প্রথম আমাদের জানতে হবে যে কোনো মুভমেন্টের শুরুটা কীভাবে? এর জন্য যেটা জানা জরুরী তা হলো  (ক)"বর্তমান অবস্থা কেমন"? এবং (খ)"বর্তমান অবস্থা কেমন হবার কথা ছিল"? যখন "ক" এবং "খ" এর মধ্যে একটা বিশাল গ্যাপ থাকে তখন সমস্যার শুরু হয়। যখন আমাদের মনে হয় আমাদের বর্তমান অবস্থা কেমন হবার কথা ছিল কিন্তু আসলে এমন না তখন আমরা কী করি? আমাদের অবস্থা বদলানোর চেষ্টা করি। আর এই অবস্থা বদলানোর জন্য প্রয়োজন হয় একটি মুভমেন্টের, একটি আন্দোলনের। এখান থেকে কোনো মুভমেন্ট/আন্দোলনের জন্ম হয়।

নারীকে সমাজ কীভাবে দেখা হয় বা নারীদের সাথে সমাজ কী রকম ব্যবহার করে? এবং নারীকে সমাজ কীভাবে দেখার কথা বা নারীদের সাথে সমাজ কীভাবে ব্যবহার করার কথা ছিল? যখন এ দু'টি প্রশ্নের উত্তর খুঁজি তখন আমরা এরমধ্যে বিশাল গ্যাপ খুঁজে পাই। এই গ্যাপকে পূরণ করার জন্য প্রয়োজন হয় একটি মুভমেন্টের একটি আন্দোলনের।

সাধারণত যে কোনো সমাজ ব্যবস্থাতেই নারীদের অভিজ্ঞিতা এই তিনটি শব্দের মধ্যদিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়, তা হল - এরা অধীনস্থ, বৈষম্যের শিকার, নিপীড়িত। এর কারণ হলো নারীদের ব্যাপারে সমাজের পুরানো দৃষ্টিভঙ্গি[Age old view -নারীরা প্রকৃতিগতভাবে দূর্বল ও বুদ্ধিবিবেকহীন যাদের সবসময় পুরুষের(পিতা,স্বামী) নির্দেশনা আর সুরক্ষায় চলতে হয়] যা অনেক আগে থেকেই প্রচলিত এবং এখনো অনেক সমাজেই বিদ্যমান।
পুরাতণ কিছু মনিষীদের উক্তি দেখা যাক-
Aristotle: The relation of male to female is by nature a relation of superior to inferior and of ruler to ruled.
Thomas Jefferson believed Women's position in house not in politics and public office.
Charles Darwin believed that a man is intellectually superior to Women.

সমাজের বড় বড় মনিষীরা যখন নারীদের ব্যাপারে এমন মন্তব্য করেন সেখানে সমাজের অন্যান্য পুরুষদের নারীদের ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গি তো যাচ্ছেতাই। ১৮ শতকে এসব দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারে কেউ আপত্তিই করেনি। এসব বদলাতে শুরু করে বিশেষ করে যখন ইউরোপ আমেরিকাতে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক পরিবর্তন আসতে শুরু করে। এরপরে ধীরে ধীরে সমাজ পরিবর্তন হতে থাকে বিভিন্ন রিভ্যুলেশান ঘটতে থাকে বিশেষ করে লিবারেলিজম যখন সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে, গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হতে থাকে তখন পুরুষদের রাজনৈতিক অধিকার, সিটিজেনশিপ দেয়া হতে থাকে। এই রাজনৈতিক অধিকার, সিটিজেনশিপ এবং এসংক্রান্ত সব রকম সুবিধা শুধুমাত্র পুরুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। নারীদের তখনো সে অধিকার দেয়া হয়নি, তাদের সেকেন্ড রেট সিটিজেন বলা হতো। নারী,শিশু,স্লেভ তাদের একই ক্যাটাগরিতে দেখা হত। তখনো পর্যন্ত নারীদের ভোটাধিকার দেবার ব্যাপারে কেউ প্রশ্নই তুলেনি, তারা মনে করত নারীরা যেহেতু অধীনস্থ(পিতা,স্বামীর) সেহেতু তাদের হয়ে পিতা বা স্বামী রিপ্রেজেন্ট করছেই সুতরাং তাদের এসব অধিকারের প্রয়োজন নাই।

এই ধারণাকে প্রথম চ্যালেঞ্জ করেন Mary Wollstonecraft তার প্রকাশিত বই "Vindication of the Rights of Women"(1792) এর মাধ্যমে। এই বইতে উনি বলেন "নারীও পুরুষের সমান যোগ্যতা রাখে, যে অধিকার একজন পুরুষ পায় নারীরও সে অধিকার পাওয়া উচিত"। এই পুস্তকটি প্রকাশিত হবার পরেই মূলত 1st Wave Feminism এর গুরুত্ব শুরু। নারী পুরুষের মধ্যকার বৈষম্য ভেঙ্গে নারী-পুরুষ সমান অধিকার প্রতিষ্টার একটি দাবী তৈরি হয়। এই বৈষম্য ভেঙ্গে সমঅধিকারের দাবী একটি অর্গেনাইজড মুভমেন্টের আকার রূপ নেয় ১৮৪৮-এ আমেরিকাতে 'Seneca Falls Convention' এর মাধ্যমে।এখান থেকে 1st Wave Feminism এর শুরু হয় যা ১৯২০ পর্যন্ত থাকে।

1st Wave Feminism এ যে দাবী ছিল পূর্ণ সিটিজেনশিপ (পলিটিকাল এবং লিগ্যাল ইকুইটি) অর্থাৎ একজন পুরুষ সমাজে যে রাজনৈতিক অধিকারগুলো ভোগ করে সেগুলো, এজন্য তারা সবচেয়ে বেশী জোর দেয় 'ভোটাধিকার' এর জন্য। তাদের ধারাণা ছিল ভোটাধিকার প্রাপ্ত হলে নারীদের অন্য যেসব সমস্যা ও সামাজিক বৈষম্যগুলো এমনিতেই চলে যাবে।

উল্লেখ্য যে, 1st Wave Feminism মুভমেন্ট শুধুমাত্র ইউএসএ এবং ইউএস তে সীমাবদ্ধ ছিল। অন্যান্য দেশগুলাতে তেমন প্রসার ঘটাতে পারেনি এই আন্দোলন। আমেরিকাতে National Women's Suffrage Association স্ট্যাবলিশ হয় ১৮৬৯ তে নারীর ভোটাধিকার প্রাপ্তির লড়াই করার জন্য। ইউকে-তে সর্বপ্রথম জন স্টুয়ার্ট মিল নামক একজন পুরুষ ১৯৬৭ সালে নারীদের ভোটাধিকার দেবার লক্ষ্যে একটি প্রস্তাব পেশ করেন "House of Common"-এ যা খারিজ হয়ে যায়। পরে ১৯০৩ সালে Women's Social and Political Union নামে একটি সংস্থা আত্মপ্রকাশ করে নারীদের ভোটাধিকার প্রাপ্তির পক্ষে লড়াই করার জন্য।

নিউজিল্যান্ড-এ নারীরা ভোট দেয়ার অধিকার পায় ১৮৯৩-তে, ইউকে-তে ১৯১৮ সালে আর ইউএসএ-তে ১৯২০ সালে। আমেরিকাতে "19th Constitutional Amendment Act"পাস করার মাধ্যমে নারীদের ভোটাধিকার দেয়া হয়।

1st Wave Feminist দের ফোকাস ছিল 'বাহ্যিক প্রতিবন্ধকতার দিকে নারীরা কতটুকু বৈষম্যের শিকার' অর্থাৎ নারীদের লিগ্যাল এবং পলিটিকাল রাইটস অর্থাৎ ভোটাধিকার দেয়ার উপরেই তাদের ফোকাস ছিল। তারা চেয়েছিল পুরুষ বাহ্যিক যেসব সুবিধা পায় ঠিক যেন সমান ভাবে নারীও সে অধিকার পাক। তাদের ধারণা ছিল ভোটাধিকার প্রাপ্তির সাথে সাথে অন্যান্য অধিকার প্রাপ্তি হয়ে যাবে। ১৮৪৮-১৯২০ সাল পর্যন্ত সময়কালকে 1st Wave Feminism এর পিরিয়ড বলা হয়। ১৯২০ সালে আমেরিকাতে ভোটাধিকার প্রাপ্তির সাথে সাথে শেষ হয়ে যায় 1st Wave Feminism.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

2nd Wave Feminism

দাউদ হায়দারের এরকম অশালীন কবিতা লেখার পেছনের গল্প-

প্রসঙ্গঃ দাউদ হায়দারের ছিনাল নারীবাদী কবিতা