দাউদ হায়দারের এরকম অশালীন কবিতা লেখার পেছনের গল্প-
নির্বাসিত কবি দাউদ হায়দারের ইতরসুলভ কবিতা এবং অত্যন্ত নোংরা মন মানসিকতা বিষয়ে লিখবার পরে তার একজন পরিচিত বন্ধু এবং শুভাকাঙ্খী নিচের মেসেজটি আমাকে পাঠিয়েছেন। মেসেজটির অংশ বিশেষ তুলে দিচ্ছি।
" দাউদ এক বোতল মদ পেলেই একটা কবিতা লিখে দেয়। এই "নারীবাদী সিনাল লেখিকা" কবিতা টি গতপতশু এক বোতল মদের বিনিময়ে লিখেছেন ১ ঘন্টার এক বাঙালি পার্টিতে বসে। বার্লিন বাঙালি মহলে ছি ছি রব ইঠেছে। আমার ও সেই পার্টতে যাওয়ার কথা ছিলো, আম যাই নি কারন আমি দাউদকে ৩০ বছর ধরে চিনি, দেখা হলেই টাকা চায়।"
বাঙালি ব্লগারদের কিছু কালো অধ্যায় নিয়ে আজকে লিখছি। কারণ এই কথাগুলো প্রকাশ হওয়া জরুরি।আজ হোক, কাল হোক, মানুষ এগুলো জানবেই। আমার লেখা যারা নিয়মিত পড়েন, তারা জানেন, আমি তসলিমা নাসরিনের যেসকল লেখার সাথে একমত হই না, সেগুলোর বিরুদ্ধে খুব স্পষ্টভাবেই যুক্তি তুলে ধরি। শুধু যুক্তি তুলে ধরেই থামি না, রীতিমত আক্রমণও করে থাকি। কিন্তু সেইসাথে এটাও জানাই, বাঙলাদেশের নারীবাদ এবং মুক্তচিন্তার আজকের অবস্থার পেছনে তসলিমার একটি বড় অবদান রয়েছে। যেই মেয়েটি ভয়ে কথা পর্যন্ত বলতে পারতো না, সে অবলীলায় আজকে ব্লগে ফেইসবুকে নিজের ইচ্ছার কথা, ভাল লাগার কথা, নিজের অধিকারের কথা লিখছে। ধর্ষণ করতে আসলে রুখে দাঁড়াবার কথা লিখছে। লাথি দিয়ে এগিয়ে আসা ধর্ষকের অণ্ডকোষ থেতলে দেয়ার প্রতিজ্ঞা করছে। যেই মেয়ে আগে ধর্ষিত হয়ে লজ্জায় আত্মহত্যার কথা ভাবতো, সেই মেয়ে আজকে ছুরি দিয়ে ধর্ষকের লিঙ্গ কেটে নেয়ার কথা লিখছে। তসলিমা ছাড়া এরকম অবস্থার সৃষ্টি হতে আরো হয়তো কয়েকযুগ লেগে যেতো।
কঠোর সমালোচনা কিংবা তসলিমার অবদানের কথা যাই বলি, ব্যক্তিগত সম্পর্কের উর্ধ্বে থেকেই বলি। যেইখানে মুক্তচিন্তা শক্তিশালী হচ্ছে সেখানে প্রশংসা করতে কার্পন্য করি না। আবার যেখানে যতটুকু সমালোচনা জরুরি, সেটাও করেছি বারবার।
উল্লেখ্য, তসলিমা নাসরিনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি কিনে দেয়ার জন্য একটি সংগঠন ফান্ড কালেক্ট করে। সেই সম্মেলনে আমিও নিমন্ত্রিত বক্তা ছিলাম। সেখানে আমি তসলিমা এবং ঐ সংগঠনের অনেকের সাথে দীর্ঘসময় আলাপ করে ঐ সমস্ত অর্থ বিপদাপন্ন ব্লগারদের জন্য ব্যয় করতে অনুরোধ করি। তসলিমাও স্বেচ্ছায় তাতে রাজী হয়ে যান, যদিও ফান্ড ওঠানোই হয়েছিল তসলিমার জন্য। এরপর থেকে যত ব্লগার ব্লগিং এর জন্য চাকরি হারিয়েছেন, আতঙ্কে দেশ ছেড়েছেন, তাদের জন্য সামান্য কিছু অর্থ ঐ ফান্ড থেকে দেয়া হয়েছে। সবাইকে নয়, নানা ধরণের ভেরিফিকেশনের পরে। শুধুমাত্র যারা সত্যিকারভাবে বিপদগ্রস্থ।
সেই তসলিমা নাসরিনের বিরুদ্ধে জার্মানিতে, একটি মহল বেশ কিছুদিন ধরেই নানা ধরণের দল পাকাচ্ছে। কারণটি আর কিছু নয়, ব্লগারদের ফাণ্ডে ভাগ বসাতে না পারার হতাশাবোধ। কোন পুরষ্কার না পাওয়ায় পেটভর্তি হিংসা। এর সাথে যুক্ত হয়েছে কবি দাউদ হায়দার। কারণ সে নিজেও প্রচণ্ড হতাশাবোধে আক্রান্ত। তিনি যেহেতু ব্লগার নন, তাই কোন ফান্ডও ভাগ্যে জোটে নি। তসলিমার প্রতি তার মন আরো বিষিয়ে দিয়েছে এই বাঙালি ব্লগার পরিবারটি। তাকে বোঝানো হয়েছে, তসলিমার জন্যেই তার আজকের এই দুর্দশা।
জার্মান প্রবাসী এক পরিবার বেশ কিছুদিন ধরেই দাউদ হায়দারকে ব্যবহার করে ব্লগারদের জন্য উঠানো ফান্ডের টাকাতে ভাগ বসাবার জন্য নিজেদের নির্বাসিত ব্লগার পরিচয় দিয়ে নানা ধরণের ফান্ডের জন্য আবেদন করেছে। অথচ, তারা মোটেও নির্বাসিত ব্লগার নয়। তারা ব্লগারদের ওপর আক্রমণের অনেকদিন আগে থেকেই জার্মানিতে থাকেন। তারা আমাকে এমন প্রস্তাবও দেয় যে, ফান্ড দেয়ার আগে ভেরিফিকেশনের সময় আমি তাদের সম্পর্কে ভাল কিছু লিখে দিলে, তাদের নির্বাসিত ব্লগার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে সেই ফান্ড থেকে ৩০% আমাকে দেয়া হবে।
তাদের সাথে একসময়ে সুসম্পর্ক থাকার পরেও, মিথ্যা কথা লেখা তো সম্ভব নয়। কারণ মিথ্যা লিখলে ঐ সকল সংগঠন জানতেই পারবে। তারা তো বোকা নয়। বিভিন্ন সংগঠন যখন এই বিষয়ে আমার কাছে জানতে চেয়েছে, যেহেতু আমি তাদের সাথে নানাভাবে যুক্ত, আমি জানিয়েছি তারা মোটেও নির্বাসিত ব্লগার নন। উনারা অনেক আগেই জার্মানিতে এসেছেন। উনাদের ফাণ্ড দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই। উনারা কোন ধরণের ফান্ডের জন্য উপযুক্ত নন।
নিজেদেরকে দাউদ হায়দারের মত দেশ ছেড়ে আসা লেখক-ব্লগার পরিচয় দিয়ে ফান্ড কালেকশনের চেষ্টা কয়েকবারই ব্যর্থ হওয়ায় সব রাগ গিয়ে পরেছে তসলিমার ওপরে, আমার ওপরেও। তাদের ধারণা হয়েছে, তসলিমার কারণেই তাদের ফান্ড আটকে আছে। আর এই কারণেই দাউদ হায়দারকে মদ খাইয়ে যদি তারা তসলিমার বিরুদ্ধে কিছু লিখিয়ে থাকে, অবাক হওয়ার মত কিছু নেই।
দাউদ হায়দারকে এক বোতল ওয়াইন খাইয়ে আপনার ইচ্ছামত যা খুশিই লিখিয়ে নিতে পারেন। তাই এই লোকের প্রতি আমার আর কোন ঘৃণা অবশিষ্ট নেই। তাকে ক্ষমা করে দিলাম।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন